বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ২৩, কিন্তু সীমান্তে তারকাঁটার বেড়ায় ঝুলতে থাকা ছবির ফেলানি যেন এখনো ১৫ বছরেই আটকে আছেন।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফের ছোঁড়া গুলিতে তিনি মারা যান। তার নিথর মৃতদেহের ছবি সীমান্তের দুই দিকেই তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল।
এরপর আট বছর পেরিয়ে গেলেও সেটার কোন বিচার যেমন হয়নি, তেমনি নিরন্তর দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে তাঁর পরিবার।
আরো পড়তে পারেন: সীমান্তে কিশোরী ফেলানি হত্যা: বিচার কি হবে?
আট সদস্যের পরিবার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় বলে জানালেন ফেলানির বাবা নুরুল ইসলাম।
“আমরা খুব অসহায় অবস্থায় আছি। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়, এছাড়া ভাত-কাপড়ের খরচ, খুব টানাটানি করে চালাতে হয়।”
তাইতো মেয়ের মৃত্যুদিনেও অসহায় হয়ে বসেছিলেন ফেলানির বাবা-মা। অবশেষে লালমনিরহাট বিজিবির সামান্য অর্থ সহায়তায় একটা মিলাদের আয়োজন করতে সমর্থ হন তারা, জানালেন ফেলানির বাবা নুরুল ইসলাম।
ভারতেই বাবার সাথে কাজ করতেন ফেলানি। আট বছর আগে এই দিনে দালালের মাধ্যমে দেশে ফিরছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় চৌধুরীহাট সীমান্তের কাঁটাতার দিয়ে তাঁর বাবা পার হয়ে গেলেও আটকে যান ফেলানি।
এরপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখানেই প্রায় ৫ ঘন্টা ঝুলে থাকে ফেলানি। সেই ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কুড়িগ্রামে ফেলানির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। বিচার ও সহায়তার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়।
নানামুখী চাপে ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর এটার বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কিন্তু তাতে ফেলানির উপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে যে বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে খালাস দেয়া হয়।
তবে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ভারতেরই একটি মানবাধিকার সংগঠন উচ্চ আদালতে যায়। কিন্তু সেই মামলার শুনানি হতে পারেনি আজও।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মামলার আইনজীবী ছিলেন এস এম আব্রাহাম লিংকন। “এটার গত বছর শুনানি হবার কথা ছিল। কিন্তু এখন তো এটা কললিস্টেই নেই। তাই নতুন করে আবার লিস্টে উঠলে হয়তো শুনানি হতে পারে। আর যদি শুনানি হয় তাহলে কল্যাণকর কিছু একটার আশা তো করাই যায়।”
সূত্র, বিবিসি